চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য

করোনাভাইরাস-কে ছড়ালো? বিজ্ঞানীরা যা বলছেন

নভেল করোনাভাইরাস। নামটি শুনলেই গা যেন শিউরে ওঠে। ‌এমন কোনো মানুষ এখন সারা পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না যে করোনাভাইরাস এর আতঙ্কে নেই।

পৃথিবীর সমস্ত দেশ সমস্ত জাতি আজ এই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার। কেউ জানে না কাকে কখন আক্রমণ করে বসে। হতদরিদ্র রাস্তা থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল উন্নত রাষ্ট্র কেউই বাদ পড়েনি কোন ভাইরাসের করালগ্রাস থেকে। ‌

অসহায় হয়ে পড়েছে আজ মানবসভ্যতা।

এই আতঙ্ক আর অসহায়ত্বের মধ্যে একটি প্রশ্ন চলে আসে। কে ছড়ালো এই করোনাভাইরাস?
কেনইবা করোনাভাইরাস এভাবে সারা বিশ্বে আক্রমণ করে বসেছে?

এই করোনাভাইরাস কি কারো সৃষ্টি? কোন দেশ অন্য দেশকে কাবু করার জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এই সকল হাজার প্রশ্ন এখন মানুষের মনে।

কে ছড়ালো করোনাভাইরাস- যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন,চীন নাকি অন্য কোন রাষ্ট্র?
আসলেই কি এটি জীবজন্তুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ঢুকেছে নাকি জীবাণু অস্ত্রের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? সংক্রমণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়াই এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ছয়লাব তাই-ই নয়, কিছু দেশের মূলধারার কিছু কিছু মিডিয়াও এসব তত্ত্ব প্রচার করছে। ষড়যন্ত্র এসব তত্ত্বগুলো আসছে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইরান থেকে। এসব দেশের সরকারগুলো সরাসরি এসবের পেছনে না থাকলেও, সরকারের সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তির কথায় এবং মিডিয়ায় এগুলো স্থান পাচ্ছে।

সন্দেহ করা হচ্ছে কাকে? কে সন্দেহ করছেন?

রাশিয়ার ভেতর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও রাশিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়ায় চীন এবং ইরানের এসব অভিযোগ-তত্ত্ব জোরেসোরে প্রচার করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইইউ’এর একটি মনিটরিং দল মার্চের ১৬ তারিখ পর্যন্ত দুমাসের এক অনুসন্ধানে ৮০টি প্রমাণ পেয়েছে যে ক্রেমলিনের সাথে ঘনিষ্ঠ মিডিয়ায় করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরণের অপ্রচার চালানো হচ্ছে। রুশ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দায়ী করা হচ্ছে।

সরকার সমর্থিত স্পুটনিক রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বাধ্য করতে ব্রিটেন এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। রুশ একটি জনপ্রিয় টিভি টকশোতে (দি বিগ গেম) ইগর নিকুলিন নামে রুশ একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেন, ব্রিটেন এই করোনা ‘অস্ত্র’ তৈরি করেছ। তিনি বলেন, “(ব্রিটেনের) পোর্টান ডাউনে একটি গবেষণাগারে বহুদিন ধরেই নানা জীবাণু এবং রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে। ” তবে রুশ সরকার দাবি করেছে, এসব বক্তব্যের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

আমেরিকার তীর চীনের দিকে আমেরিকার ভেতরেও করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং ঘুরে ফিরে বলেই চলেছেন, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী। মি ট্রাম্পের সমর্থক হিসাবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলছেন, করোনাভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কংগ্রেসে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন এক রিপাবলিকান রাজনীতিক জোয়ান রাইট টুইট করেছেন, “উহান ল্যাবরেটরিতে এই করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছে, এবং ঐ গবেষণায় চীনাদের সহায়তা করেছেন বিল গেটস। ” সমালোচনার মুখে পরে তিনি ঐ টুইট ডিলিট করে দেন। তবে আমেরিকার কট্টর ডানপন্থী বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনো শেষ নেই।

যা বলছেন বিজ্ঞানীরা

পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তারা বলেছেন, “জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়,গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে। ” এছাড়া ইতোমধ্যেই পৃথিবীর অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর বিজ্ঞানী ও গবেষকরা অনেক গবেষণাপত্রে প্রমাণ দিয়েছেন যে এই ভাইরাস মানুষের তৈরি কোনো জীবাণু বা জৈব অস্ত্র না।

বিজ্ঞানীরা এরমধ্যেই এই SARS-CoV-2 বা করোনা ভাইরাসের দুই প্রকার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য- আলফা ও বিটাকরোনাভাইরাসের জিনেটিক তথ্যের তুলনামূলক কাঠামোগত বিশ্লেষণ এবং জৈব-রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখাইছেন, এই ভাইরাস মানুষের তৈরি করা কোনো কৃত্রিম জীবাণু না। ১৭ই মার্চ নেচারমেডিসিনে প্রকাশিত ‘দা প্রক্সিমাল অরিজিন অভ SARS-CoV-2’ নামক আর্টিকেলে গবেষকরা দেখান, এই ভাইরাসের জিনের প্রোটিনে যে ছয় ধরণের অ্যামইনো অ্যাসিড সম্বলিত ‘রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেইন’ বা RBD পাওয়া যায়, তা এই ভাইরাসের বাহক- এইক্ষেত্রে মানুষের ACE2 রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হইলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হইতে পারেন। এই ACE2 রিসেপ্টরের সাথে SARS-CoV-2-র স্পাইক প্রোটিনের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’এর কারণে হয় বলে গবেষকরা ধারণা করেন।

এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতই এই করোনা ভাইরাসের প্রোটিন স্পাইকের সাবইউনিটে পাওয়া পলিবেসিক ফিউরিন ক্লিভেজ সাইট প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসরে তার বাহক খুঁজতে সাহায্য করে। গবেষকরা ধারণা করেন, এই ভাইরাস প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মানুষরে আক্রমণ করার আগে অন্য প্রাণীকে প্রাথমিক আধার হিসাবে ব্যবহার করে এবং পরবর্তীতে ঐ প্রাণীর মাধ্যমে এই ‘জুনোসিস’ বা প্রাণিবাহিত রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায়। মানুষের চাইতে যেসব প্রাণীর জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি এবং যেসব প্রাণীর মানুষের মত ACE2 রিসেপ্টর আছে, সেসব প্রাণীকেই এই ভাইরাস প্রাথমিক আধার হিসাবে ব্যবহার করে। দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, এই ভাইরাসের পূর্বসূরী ভাইরাস কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ না করে অনেক আগে থেকেই মানুষের শরীরে বাস করছিলো, পরবর্তীতে প্রাণীবাহিত নতুন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ফলে প্রাথমিক ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে।

করোনা গোত্রীয় আরেকটা ভাইরাস MERS-CoV এই পদ্ধতিতে মরু অঞ্চলের এক প্রকার উট থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিলো। অনেকের মতে আবার, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রায় কয়েক লক্ষ বছর আগে বরফ-যুগে মাটির নিচে চাপা পড়া ‘পারমাফ্রস্ট’ হয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসেরা পৃথিবীতে ফেরৎ আসা শুরু করেছে।

২০১৬ সালে প্রায় ৭০ বছর আগের এই ধরণের পারমাফ্রস্টেড এ্যানথ্রাক্স জীবাণু তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলে বাইরে বের হয়ে আসে। এবং তাতে আক্রান্ত হয়ে সাইবেরিয়ান তুন্দ্রা অঞ্চলে বেশ কিছু রেইনডিয়ার এবং মানুষ মারা যান। শুধু এ্যানথ্রাক্স না, বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা ১৯১৮ সালের ভয়ানক স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাস, স্মল পক্স এবং মধ্যযুগের বিউবনিক প্লেগের ভাইরাসেরও পৃথিবীতে আবার ফেরৎ আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন অনেক বিজ্ঞানী।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা, দ্য গার্ডিয়ান

আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নোটিশ ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক জনাব আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২০ নভেম্বর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। বাবা আবদুল গফুর ভূঁইয়া এবং মা রহিমা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বয়স ৫ বছর। মেয়ে ফাবিহা জান্নাত বয়স ১ বছর। আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া এর শিক্ষাজীবন আনসার আহাম্মদ ভূঁইয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ম্যানেজমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উত্তরা ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে বিপিএড সম্পন্ন করেন। আজিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ লাকসাম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুদিন ক্লাস করার পর। পারিবারিক কারণে নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজ এ কিছুদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর ভালো না লাগায় পুনরায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি নানা রকম সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। কর্মজীবন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগদেন। বেশ কিছুদিন পর তিনি ২০১৯ সালে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় কুয়েত পারি জমান। কিন্তু সেখানকার কাজের পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় পুনরায় আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে পূর্বের পদে কাজে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি স্বপ্ন গ্রাফিক্স এন্ড নেটওয়ার্ক নামে একটি মাল্টিমিডিয়া এবং প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী সেই সাথে স্বপ্ন ইশকুল নামক একটি কম্পিউটার ট্রেণিং ইনস্টিটিউট এর মালিকানায় আছেন যেখানে তিনি নিজেই ক্লাস পরিচালনা করেন। লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্ম ছাত্র অবস্থায় তিনি লেখা-লেখি ও সাহিত্য কর্মের সাথে জড়িত আছেন। ২০১১ সালে রাইটার্স এসোসিয়েশন এর ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বন্ধু চিরন্তন প্রকাশিত হয়। এর পর তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

অ্যাডস্ ব্লকার পাওয়া গেছে!

দয়া করে আমাদের সাপোর্ট করার জন্য আপনার এডস্ ব্লকার ডিজেবল করে পেইজটি রিলোড করুন! ধন্যবাদ